খাবারের লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা শিশুদের হত্যা করল ইসরায়েলি বাহিনী

সংগৃহীত ছবি

 

অনলাইন ডেস্ক : গাজার মধ্যাঞ্চলের দেইর আল-বালাহ এলাকায় একটি স্বাস্থ্য ক্লিনিকের সামনে পুষ্টিকর খাদ্য সহায়তার লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় ড্রোন হামলা চালায় ইসরায়েলি বাহিনী। এতে অন্তত ১৫ জন ফিলিস্তিনি নিহত হন, যাদের মধ্যে আটজন শিশু ও দুইজন নারী রয়েছেন বলে জানিয়েছে আল-আকসা শহীদ হাসপাতাল।

 

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, নিহতদের অধিকাংশ ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান। হাসপাতালের ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, মেঝেতে পড়ে আছে একাধিক শিশুর নিথর দেহ, চিকিৎসকরা আহতদের সেবায় ব্যস্ত।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা ‘প্রজেক্ট হোপ’, যারা ওই ক্লিনিক পরিচালনা করে, এই হামলাকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের সরাসরি লঙ্ঘন বলে আখ্যা দিয়েছে।

 

ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) দাবি করেছে, তারা হামাসের ‘সন্ত্রাসী সদস্যদের’, বিশেষত নুখবা ইউনিটের এক সদস্যকে লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে। তবে বেসামরিক প্রাণহানির জন্য তারা দুঃখ প্রকাশ করেছে এবং তদন্ত চলছে বলেও জানিয়েছে।

 

প্রত্যক্ষদর্শী ইউসুফ আল-আইদি বলেন, ‘হঠাৎ ড্রোনের শব্দ, তারপর বিকট বিস্ফোরণ। মুহূর্তেই চারপাশ রক্ত আর কান্নায় ভরে যায়।’

এক আত্মীয় জানান, তার গর্ভবতী ভাগ্নি মানাল ও তার শিশুকন্যা ফাতিমাও নিহত হয়েছেন। মানালের ছেলে এখনো আইসিইউতে ভর্তি। পাশে থাকা এক নারী কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “কি অপরাধে ওদের হত্যা করা হলো? আমরা চোখের সামনে মরছি।”

 

প্রজেক্ট হোপের প্রেসিডেন্ট রাবিহ তোরবে বলেন, “এই ক্লিনিকগুলো গাজার মানুষের শেষ ভরসা। অথচ এখন সেখানেই মৃত্যুর হাতছানি।” তিনি এটিকে যুদ্ধাপরাধ আখ্যা দিয়ে বলেন, “যুদ্ধবিরতির আলোচনা চললেও গাজায় কেউই নিরাপদ নয়।”

 

ইউনিসেফ প্রধান ক্যাথেরিন রাসেল এই হামলাকে ‘অযৌক্তিক ও মানবতার বিরুদ্ধে’ আখ্যা দিয়েছেন।

 

একই দিন গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় আল-মাওয়াসি উপকূলীয় এলাকায় আরেকটি ড্রোন হামলায় পাঁচজন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে তিনটি শিশু ছিল। ভিডিওতে দেখা যায়, বালির নিচ থেকে তাদের মরদেহ উদ্ধার করা হচ্ছে।

 

এদিকে, গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি নিয়ে আলোচনা চললেও তা অচল অবস্থায় রয়েছে। ইসরায়েলি কর্মকর্তারা বলছেন, চুক্তি হতে এক–দুই সপ্তাহ লাগতে পারে। তবে হামাস জানায়, তারা একটি পূর্ণাঙ্গ চুক্তি চায় যা ইসরায়েলের আগ্রাসন থামাবে।

 

জাতিসংঘ জানিয়েছে, চার মাস পর প্রথমবারের মতো গাজায় সামান্য পরিমাণ জ্বালানি প্রবেশ করেছে। তবে তা চাহিদার তুলনায় একদিনেরও কম। গাজায় বর্তমানে স্বাস্থ্যসেবা, পানি, খাদ্য ও ওষুধের তীব্র সংকট চলছে।  সূত্র: বিবিসি

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» দগ্ধ হয়েও শিক্ষার্থীদের বাঁচানোর চেষ্টা করা শিক্ষিকা মাহরিন লাইফ সাপোর্টে

» জামায়াতের আমির-সেক্রেটারি দগ্ধদের দেখতে বার্ন ইনস্টিটিউটে

» আহতদের চিকিৎসা সহায়তায় বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের মেডিকেল টিম গঠন

» উত্তরায় বিমান বিধ্বস্ত: তিন দিন স্থগিত জুলাইয়ের অনুষ্ঠান

» বিমান বিধ্বস্ত হতাহত পরিবারের পাশে থাকার আহ্বান খালেদা জিয়া

» দগ্ধদের দেখতে নেতাকর্মীদের নিয়ে হাসপাতালে যাওয়া বন্ধ করুন: সারজিস

» সরকারের ঘাড়ে বন্দুক রেখে তারা আখের গোছাতে চায়, নির্বাচন চায় না

» নিজেদেরই জবাব দিতে পারছি না, নিহতদের পরিবারকে কী জবাব দেব?

» উত্তরায় বিমান বিধ্বস্ত : বার্ন ইনস্টিটিউটে রক্ত দিতে মানুষের ঢল

» আহতদের চিকিৎসার জন্য বিদেশ থেকে চিকিৎসক আনা হবে: আসিফ নজরুল

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

খাবারের লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা শিশুদের হত্যা করল ইসরায়েলি বাহিনী

সংগৃহীত ছবি

 

অনলাইন ডেস্ক : গাজার মধ্যাঞ্চলের দেইর আল-বালাহ এলাকায় একটি স্বাস্থ্য ক্লিনিকের সামনে পুষ্টিকর খাদ্য সহায়তার লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় ড্রোন হামলা চালায় ইসরায়েলি বাহিনী। এতে অন্তত ১৫ জন ফিলিস্তিনি নিহত হন, যাদের মধ্যে আটজন শিশু ও দুইজন নারী রয়েছেন বলে জানিয়েছে আল-আকসা শহীদ হাসপাতাল।

 

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, নিহতদের অধিকাংশ ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান। হাসপাতালের ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, মেঝেতে পড়ে আছে একাধিক শিশুর নিথর দেহ, চিকিৎসকরা আহতদের সেবায় ব্যস্ত।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা ‘প্রজেক্ট হোপ’, যারা ওই ক্লিনিক পরিচালনা করে, এই হামলাকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের সরাসরি লঙ্ঘন বলে আখ্যা দিয়েছে।

 

ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) দাবি করেছে, তারা হামাসের ‘সন্ত্রাসী সদস্যদের’, বিশেষত নুখবা ইউনিটের এক সদস্যকে লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে। তবে বেসামরিক প্রাণহানির জন্য তারা দুঃখ প্রকাশ করেছে এবং তদন্ত চলছে বলেও জানিয়েছে।

 

প্রত্যক্ষদর্শী ইউসুফ আল-আইদি বলেন, ‘হঠাৎ ড্রোনের শব্দ, তারপর বিকট বিস্ফোরণ। মুহূর্তেই চারপাশ রক্ত আর কান্নায় ভরে যায়।’

এক আত্মীয় জানান, তার গর্ভবতী ভাগ্নি মানাল ও তার শিশুকন্যা ফাতিমাও নিহত হয়েছেন। মানালের ছেলে এখনো আইসিইউতে ভর্তি। পাশে থাকা এক নারী কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “কি অপরাধে ওদের হত্যা করা হলো? আমরা চোখের সামনে মরছি।”

 

প্রজেক্ট হোপের প্রেসিডেন্ট রাবিহ তোরবে বলেন, “এই ক্লিনিকগুলো গাজার মানুষের শেষ ভরসা। অথচ এখন সেখানেই মৃত্যুর হাতছানি।” তিনি এটিকে যুদ্ধাপরাধ আখ্যা দিয়ে বলেন, “যুদ্ধবিরতির আলোচনা চললেও গাজায় কেউই নিরাপদ নয়।”

 

ইউনিসেফ প্রধান ক্যাথেরিন রাসেল এই হামলাকে ‘অযৌক্তিক ও মানবতার বিরুদ্ধে’ আখ্যা দিয়েছেন।

 

একই দিন গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় আল-মাওয়াসি উপকূলীয় এলাকায় আরেকটি ড্রোন হামলায় পাঁচজন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে তিনটি শিশু ছিল। ভিডিওতে দেখা যায়, বালির নিচ থেকে তাদের মরদেহ উদ্ধার করা হচ্ছে।

 

এদিকে, গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি নিয়ে আলোচনা চললেও তা অচল অবস্থায় রয়েছে। ইসরায়েলি কর্মকর্তারা বলছেন, চুক্তি হতে এক–দুই সপ্তাহ লাগতে পারে। তবে হামাস জানায়, তারা একটি পূর্ণাঙ্গ চুক্তি চায় যা ইসরায়েলের আগ্রাসন থামাবে।

 

জাতিসংঘ জানিয়েছে, চার মাস পর প্রথমবারের মতো গাজায় সামান্য পরিমাণ জ্বালানি প্রবেশ করেছে। তবে তা চাহিদার তুলনায় একদিনেরও কম। গাজায় বর্তমানে স্বাস্থ্যসেবা, পানি, খাদ্য ও ওষুধের তীব্র সংকট চলছে।  সূত্র: বিবিসি

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com